সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
বেতাগী প্রতিনিধি, বরগুনা।।
বরগুনার বেতাগীতে করোনার প্রাদুর্ভাবরে মধ্যেই ডায়রিয়ার চরম প্রকোপে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ইতোমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে চার জনের।
এদিকে হাসপাতালে স্যালাইন সংকটের কারনে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা দূর্বল হয়ে পরছে। বাহিরের র্ফামিসিতে ৯০ টাকার আইভি স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে । তবে তা প্রকাশ্যে নয় গোপনে। গত ২৮ ঘন্টায়(সোমবার সকাল- সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) নতুনভাবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৩ জন। তাই চাপ সামলাতে হাসপাতালের বারন্দায় বাধ্য হয়ে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওয়ার্ডের বাইরে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে চিকিৎসাধীন রোগীর। হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন নেই। ফলে তা বাইরের দোকান থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এ সপ্তাহে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ও চিকিৎসাধিন আছে এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারনে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের শতকরা হারের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়াও এই এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ালঘাটা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম(৭০) নামের এক বৃদ্ধ ও পৌরসভার চন্দ্র ভানু নামের এক বৃদ্ধা, হোসনাবদের বাসিন্দা শারমিন আক্তার(১৬) বুড়ামুমদার ইউনিয়নের এক বৃদ্ধা সহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় দুজন ও বাড়িতে দুজন মারা যান। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই রোগীদের ওয়ার্ডের বারান্দাসহ সামনের খালি জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রচন্ড গরমে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না করায় রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।
বেতাগী হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, রোগী ভর্তির সময় মাত্র একটি স্যালাইন সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো বাজার থেকে কিনতে হয়েছে। এছাড়া ওষুধও ঠিকমতো দেওয়া হয় না, এবং ডাক্তারও ঠিকভাবে দেখেনা বলে অভিযোগ তাদের। বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া এক রোগীর স্বজন সাইফুল জানান, শুক্রবার ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে একটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। পরে রোগীর আরেকটি স্যালাইনের দরকার হলে তা দোকান থেকে কিনেছেন অতিরিক্ত দামে। এছাড়া বারান্দায় বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় প্রচন্ড গরমে খুব কষ্টে আছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রবিন্দ্রনাথ সরকার জানান, হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় আনুপাতিক হারে রোগীদের স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য সাত হাজার আইভি স্যালাইন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তবে এখনো হাতে পাইনি। পেলে স্যালাইন সংকট দূর হবে।তাছাড়া রোগীদের সেবাপ্রদানে আমরা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।